প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্রে অভিলক্ষ্য হিসেবে দর্পণ ব্যবহার করা হয়। ১৬৬৩ সালে বিজ্ঞানী গ্রেগরী সর্বপ্রথম এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। তবে সবচেয়ে প্রচলিত প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৬৬৮ সালে। নিচে এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের বর্ণনা দেওয়া হলো।
একটি ধাতব নলের এক প্রান্তে একটি বড় উন্মেষবিশিষ্ট অবতল দর্পণ লাগিয়ে এই যন্ত্র তৈরি করা হয়। অবতল দর্পণটি যন্ত্রের অভিলক্ষ্যের কাজ করে। নলের খোলা মুখ লক্ষ্যবস্তুর দিকে রাখা হয় [চিত্র ৬.১৫] অবতল দর্পণের প্রধান অক্ষের উপর প্রধান অক্ষের সাথে 45° কোণে একটি সমতল দর্পণ M, অবতল দর্পণের ফোকাস দূরত্বের মধ্যে স্থাপন করা হয়। সমতল দর্পণের সামনে নলের গায়ে বসানো উত্তল লেন্স যন্ত্রের অভিনেত্র হিসেবে কাজ করে ।
বহু দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু থেকে আগত সমান্তরাল রশ্মিসমূহ অবতল প্রতিফলকে প্রতিফলিত হলে প্রতিফলকের o ফোকাস তলে একটি বাস্তব, উল্টো ও খর্বিত বিম্ব গঠন করতো যদি সমতল দর্পণটি এর অবস্থানে থেকে প্রতিফলিত রশ্মিকে বাধা না দিত। কিন্তু সমতল দর্পণ প্রতিফলিত রশ্মিকে বাধা দেওয়ায় এখন বিশ্ব সমতল দর্পণের সম্মুখে গঠিত হয়। অভিনেত্র লেন্সটিকে এমনভাবে স্থাপন করা হয় যেন দর্পণে গঠিত বিম্বটি এর প্রধান ফোকাসে থাকে ফলে এর একটি অবাস্তব, সোজা ও বিবর্ধিত বিশ্ব অসীম দূরত্বে গঠিত হয়। দেখার সুবিধের জন্য অভিনেত্র লেন্সটিকে একটু সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে চোখের নিকট বিন্দুতে বিশ্ব গঠন করা হয়। বিবর্ধন : দূরবীক্ষণ যন্ত্রের বিবর্ধন বলতে বিশ্ব ও লক্ষ্যবস্তুর দ্বারা চোখে সৃষ্ট কোণের অনুপাতকে বোঝায়। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের বিবর্ধন M হলে, অসীমে গঠিত বিশ্বের ক্ষেত্রে
M =অবতল দর্পণের ফোকাস দূরত্ব/অভিনেত্র লেন্সের ফোকাস দূরত্ব
বা,
বিম্ব চোখের স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্বে গঠিত হলে বিবর্ধন,
এখানে, fo = অবতল দর্পনের ফোকাস দূরত্ব, fe = উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব এবং D = স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব।
বাস্তব ক্ষেত্রে অভিনেত্রে একটি উত্তল লেন্সের পরিবর্তে একাধিক লেন্সের সমন্বয় ব্যবহার করা হয়।
সুবিধা : প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের প্রধান সুবিধা হচ্ছে দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু থেকে আগত আলো দর্পণে প্রতিফলিত হয় বলে সেখানে আলোর শোষণ তুলনামূলকভাবে কম হয়। ফলে এই যন্ত্রে সৃষ্ট বিশ্ব অধিকতর উজ্জ্বল হয়।
দুটি হেলানো সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যমকে প্রিজম বলে। প্রিজমে ছয়টি আয়তক্ষেত্রিক তল [চিত্র ৬.১৬] অথবা তিনটি আয়তক্ষেত্রিক ও দুটি ত্রিভুজাকৃতি তল থাকে
যে সমতল পৃষ্ঠদ্বয় পরস্পর আনত থাকে তাদেরকে প্রিজমের প্রতিসারক পৃষ্ঠ বলে। ৬.১৭ চিত্রে ABB' A ‘ ও ACC’ A' প্রতিসারক পৃষ্ঠ। প্রতিসারক পৃষ্ঠদ্বয়ের মধ্যবর্তী কোণকে প্রিজমের কোণ বা প্রতিসারক কোণ বলে। চিত্রে <BAC প্রিজমের প্রতিসারক কোণ। প্রতিসারক পৃষ্ঠদ্বয় যে রেখা বরাবর পরস্পরের সাথে মিলিত হয় তাকে প্রিজমের প্রতিসারক প্রাপ্ত বা প্রান্তরেখা বলে। চিত্রে AA' রেখা প্রান্তরেখা। প্রিজমের প্রতিসারক প্রান্তের সাথে লম্বভাবে থাকে এমন যে কোনো অংশকে প্রিজমের প্রধান ছেদ বলে। চিত্রে ABC প্রিজমের প্রধান ছেদ। প্রিজমের প্রতিসারক প্রান্তের বিপরীত দিকের পৃষ্ঠকে প্রিজমের ভূমি বলে । চিত্রে BB' C' C প্রিজমের ভূমি ।
আরও দেখুন...